মহারাজপুর, গুরুদাসপুর, নাটোরের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ এবং শিউলি বেগমের ২য় ছেলে সামি। কিছুটা সমস্যা নিয়েই সামি এই পৃথিবীর আলো দেখে।যার ফলে জম্মের পর পরই তাকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। এর পর সামির বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা লক্ষ্য করলেন যে, সামি অন্যান্য বাচ্চাদের মত স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না। যে বয়সে সামির ঘাঁড় শক্ত হবার কথা, বসার ও হাঁটার কথা, কথা বলার কথা, অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সে সে বিছানায় শুয়েই জীবন পার করছে। শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে সামির বুদ্ধিগত সমস্যাও ছিল; যেমন- সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা সমস্যা, নাম ধরে ডাকলে কিছু সময় পর উত্তর দেয়া ইত্যাদি। সামির এই সমস্যাগুলো নিয়ে তার কৃষক বাবা ও গৃহিণী মা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। সামির দরিদ্র বাবা তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মোটামুটি নিঃস্ব হয়ে পড়েন । বিভিন্ন হাঁসপাতালে চিকিৎসা করালেও তেমন কোন উন্নতি না হওয়াতে তার পরিবার খুবই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে সামির বয়স যখন ৫ বছর ৬ মাস তখন তারা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, নাটোর অফিসের কথা জানতে পারেন
এবং সামিকে ''প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র'', নাটোর অফিসে নিয়ে আসেন। নাটোর অফিসের কর্তব্যরত কনসালট্যান্ট(ফিজিওথেরাপি) সামিকে আন্তরিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেরিব্রালপালসি হিসেবে চিহ্নিত করেন। সামির সমস্যাগুলো হলো ঘাঁড় নুয়ে পড়ে, মাংস পেশীর শক্তি কম, দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারে না, নিজের কাজ নিজে করতে পারে না, লালা পড়ে, কোন কিছু সহজে বুঝতে ও কথা বলতে পারে না ইত্যাদি এর প্রেক্ষিতে চিকিৎসক সামিকে একটি চিকিৎসা পরিকল্পনা দেন এবং সে অনুযায়ী তাকে প্রতিদিন সেবা কেন্দ্রে এসে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি এবং স্পীচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপী চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সাথে বাবা-মায়ের মানসিক চিন্তা দূর করার জন্য এবং সামিকে সঠিক ভাবে পরিচর্চার জন্য তাদেরকে কাউন্সেলিং করান। ফিজিওথেরাপিতে সামিকে ঘাঁড়ের এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, (টেন্ডো অ্যাকেলিস), ব্যালেন্সিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি চিকিৎসার মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়।অকুপেশনাল থেরাপিতে সামিকে গ্রস মটর, ফাইন মটর এক্টিভিটিস, এ ডি এল প্রাকটিস ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্পীচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিতে সামির যোগাযোগ দক্ষতা, ভাবের আদান-প্রদান, লালা পড়া, এবং ভাষাগত সমস্যা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
''প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র'', নাটোর অফিস থেকে উপযুক্ত সেবা পেয়ে সে এখন হাত দিয়ে খাবার খেতে পারে, একা একা বসতে পারে, সোয়া থেকে উঠতে পারে, হামাগুড়ি দিতে পারে, ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে, আগের মত লালাও পড়ে না, মাংস পেশীর শক্তি বেড়েছে, সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সে এখন সব কিছু মোটামুটি বলতে ও বুঝতে পারে।
বিনামূল্যে থেরাপি সেবার ফলে সামির প্রতিবন্ধিতা উত্তরনের মাধ্যমে কিছুটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারায় তার দরিদ্র বাবা-মা বাংলাদেশ সরকার ও "প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র" নাটোর অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞ। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে তারা প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুকিতে থাকা মানুষের জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করেন এবং এই সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস